ভ্রমণ তালিকায় বাংলাদেশ কেন?

বাংলাদেশ

প্রকৃতি নিপুন হাতে গড়া এক স্বপ্নময় উদ্যান যেন বাংলাদেশ। প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্র্যে এই দেশে রয়েছে পরিচিত অপরিচিত হাজারো আকর্ষনীয় স্থান, যা ভ্রমনপিয়াসী সবাইকে মুগ্ধ করে। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, ঐতিহাসিক মসজিদ এবং মিনার, পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত, পাহাড়, অরণ্য ইত্যাদি অন্যতম।

দক্ষিণ এশিয়ার উত্তর পূর্ব অংশে অবস্থিত বাংলাদেশের উত্তর সীমানা থেকে কিছু দূরে হিমালয় পর্বতমালা এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা, মিজোরাম রাজ্য এবং মায়ানমারের পাহাড়ী এলাকা জনসংখ্যায় বিশ্বে অষ্টম বৃহত্তম দেশ বাংলাদেশ, যদিও আয়তনে বিশ্বে ৯৪তম। ৬টি ক্ষুদ্র দ্বীপ ও নগররাষ্ট্রের পরেই বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশ।

মাত্র ৫৬ হাজার বর্গমাইলেরও কম এই ক্ষুদ্রায়তনের দেশটির প্রাক্কলিত (২০১৮) জনসংখ্যা ১৮ কোটির বেশি অর্থাৎ প্রতি বর্গমাইলে জনবসতি ২৮৮৯ জন (প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১১১৫ জন)। দেশের জনসংখ্যার ৯৯ শতাংশ মানুষের মাতৃভাষা বাংলা।

এই ক্ষু্দ্রদেশে রয়েছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও জাতিসত্তা। এদের মধ্যে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চংগ্যা, ম্রো, লুসাই, বোম, পাংখো, খুমি, চাক, খেয়াং উল্লেখযোগ্য। এসব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও ক্ষুদ্র জাতিস্বত্তা ও অ-উপজাতীয় জনগোষ্ঠী তাদের নিজ নিজ ভাষা, সাংস্কৃতি, ধর্ম, ঐতিহ্য ও কৃষ্টির স্বকীয়তা বজায় রেখে যুগ যুগ ধরে একে অপরের পাশাপাশি বসবাস করে আসছে। ফলে এখানে উৎসব চলে বছর ধরে।

 

গ্রাম ও প্রকৃতি

সরকারি হিসাবে বাংলাদেশের গ্রামের সংখ্যা প্রায় সত্তর হাজার। সিলেটের হবিগঞ্জের বানিয়াচং সবচেয়ে বড় গ্রাম ও সবচেয়ে ছোট গ্রাম তিলইন। তিলইন গ্রামের অবস্থান কুমিল্লার লালমাই উপজেলার বেলঘর ইউনিয়নে। সবচেয়ে ছোট এই গ্রামে লোকসংখ্যা মাত্র ৩৮ জন।

অপরদিকে ১২০টি পাড়া ও ৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত সবচেয়ে বড় গ্রাম ১ লাখ ২০ হাজার মানুষ বানিয়াচংয়ে বাস করেন । বলা হয়ে থাকে, শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গ্রাম ও ছোটগ্রামও বানিয়াচং ও তিলইন!

নদীপ্রধান দেশ হওয়ায় বাংলাদেশের অধিকাংশ গ্রামের সাথে নদীর নিবিড় সম্পর্ক। গ্রামের অধিকাংশ মানুষের জীবন-জীবিকার সাথেও নদীর সম্পর্ক রয়েছে। নদী ছাড়াও রয়েছে হাজারো খাল, বিল, হাওড় ও বাওড়। প্রত্যেকটি গ্রামেই দেখা মেলে এমন জলাশয়ের। গ্রামগুলোর সৌন্দর্য ও বৈচিত্রের প্রধান অনুসঙ্গ এসব জলাশয়।

সবুজের সমারোহ প্রত্যেকটি গ্রামেরই সাধারণ বৈশিষ্ট্য। গ্রামগুলো ছবির মতন যেন সৃষ্টিকর্তা এঁকেছেন আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে। সব গ্রামেই শাপলা, চালতা, বেলী, নয়নতারা, কলমি, কামিনী, অপরাজিতা, কাঠালচাঁপা, দোলনচাঁপা, শিমুল, ঝুমকো জবা, জারুল, ঘাসফুল সহ হাজারো প্রকৃতির ফুল গ্রামগুলোর আনাচে-কানাচে, ঝোপে-ঝাড়ে শোভাবর্ধন করে আপন মহিমায়।

মুক্ত আকাশে ডানা মেলে ঘুরে বেড়ায় দোয়েল, মাছরাঙ্গা, শালিক, ময়না, টিয়া, ডাহুক, বক, বউ কথা কও, তিতির, চখাচখি, কাঠঠোকড়া, মোহনচূড়া, মাছরাঙা, পাপিয়া, ফিঙে সহ হাজারের কাছাকাছি প্রজাতির পাখি।

আম, জাম, কাঠাল, লিচু, জাম, করমচা, নারিকেল, সুপারি সহ অসংখ্য প্রজাতির গাছ আর লতাপাতার নিবিড় ঘনিষ্ঠতা গ্রামগুলোর মোহনীয়তাকে পরিপূর্ণতা দিয়েছে। যেকোনো গ্রামের বাঁশঝাড় কিংবা বটের ছায়ায় বসে পাখির কিচির-মিচিরের সাথে কাটানো একটি লগ্ন হৃদয়কে হাজার বছর বাঁচার জন্য আগ্রহী করে তোলার জন্য যথেষ্ট।

 

নদ নদী

শাখা-প্রশাখাসহ প্রায় ৮০০ নদ-নদী বিপুল জলরাশি নিয়ে ২৪,১৪০ কিলোমিটার জায়গা দখল করে দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এসব নদনদী । দেশের উল্লেখযোগ্য নদ-নদী হলো- পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র, সুরমা, কুশিয়ারা, মেঘনা ও কর্ণফুলী। নদীপ্রধান দেশ হওয়ায় অধিকাংশ গ্রামের সাথে নদীর নিবিড় সম্পর্ক।

অধিকাংশ মানুষের জীবন-জীবিকার সাথেও নদীর সম্পর্ক রয়েছে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, সুরমা, করতোয়া, ব্রহ্মপুত্র সহ দুই শতাধিক নদী বয়ে গেছে অধিকাংশ গ্রামাঞ্চলের বুক চিরে। নদী ছাড়াও রয়েছে হাজারো খাল, বিল, হাওড় ও বাওড়। প্রত্যেকটি গ্রামেই দেখা মেলে এমন জলাশয়ের।

গ্রামগুলোর সৌন্দর্য ও বৈচিত্রের প্রধান অনুসঙ্গ এসব জলাশয়। বাংলাদেশের গ্রামগুলোর নামগুলো যেমন চমৎকার, মনে ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করে তেমনি সু্ন্দর অধিকাংশ হাওড়, বাওড়, বিলগুলোর নামও। যেমন হাকালুকি হাওড়, চলন বিল, বিল ডাকাতিয়া, তামাবিল, টাঙ্গুয়ার হাওড় ইত্যাদি।

 

প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন

হাজার বছরের ইতিহাস, জাতিসত্তা বিকাশের সুদীর্ঘ পথ-পরিক্রমা উদ্ঘাটনে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো অনন্য ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে প্রাচীন স্থাপত্য-বৌদ্ধবিহার, মন্দির, মসজিদ, বসতি, আবাসিক গৃহ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জমিদার বাড়ী অথবা রাজপ্রাসাদ, অসংখ্য প্রাচীন পুকুর ও দীঘি, শান বাঁধানো পুকুরঘাট, কুয়া, পোড়ামাটির ফলকচিত্র, পোড়ামাটি ও পাথরের ভাস্কর্য, মৃৎপাত্র।

বর্তমানে ৪৫১টি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি রয়েছে । তন্মধ্যে মহাস্থানগড়, ময়নামতি, সীতাকোট বিহার, পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার, ছোট সোনা মসজিদ, ষাট গম্বুজ মসজিদ, কান্তজীর মন্দির, ভাসুবিহার, বিহার ও বারবাজার, লালবাগ দুর্গ উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিত নিদর্শন সম্পর্কে বিস্তারিত পাবেন এ archaeology.gov.bd সাইট এ।

 

বঙ্গোপসাগর

বঙ্গোপসাগর” বিশ্বের বৃহত্তম উপসাগর। ভারত মহাসাগরের উত্তর অংশে অবস্থিত এটি একটি প্রায় ত্রিভূজাকৃতি উপসাগর। উপসাগরের পশ্চিম দিকে রয়েছে ভারত ও শ্রীলঙ্কা, উত্তর দিকে রয়েছে ভারত ও বাংলাদেশ এবং পূর্ব দিকে রয়েছে মায়ানমার ও থাইল্যান্ড। বঙ্গোপসাগরের ঠিক মাঝখানে বিরাজ করছে ভারতবর্ষের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ।

বঙ্গোপসাগরের আয়তন ২১,৭২,০০০ বর্গকিলোমিটার। গঙ্গা ও তার প্রধান দুই শাখানদী পদ্মা ও হুগলি, ব্রহ্মপুত্র ও তার উশাখানদী যমুনা ও মেঘনা, ইরাবতী, গোদাবরী, মহানদী, কৃষ্ণা, সুবর্ণরেখা, কাবেরী ইত‍্যাদি নদীসমূহ এই উপসাগরে এসে মিশেছে।। বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী গুরুত্বপূর্ণ বন্দরগুলি হল চেন্নাই, চট্টগ্রাম, কলকাতা, হলদিয়া, মঙ্গলা, পারাদীপ, টুটিকোরিন, বিশাখাপত্তনম ও ইয়াঙ্গন।

বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার এই উপসাগরের তীরে বাংলাদেশ রাষ্ট্রে অবস্থিত। এই উপসাগরের তীরে অবস্থিত বিখ‍্যাত পর্যটন কেন্দ্রগুলি হল আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, চেন্নাই, পুুুরি, বিশাখাপট্টনম, সুুুুন্দরবন, দিঘা, ফুকে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ত্রিংকোমালি ইত‍্যাদি।

 

সুন্দরবন : সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন

বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রশস্ত বনভূমি যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলীর অন্যতম। গঙ্গা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীত্রয়ের অববাহিকার বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত এই অপরূপ বনভূমি বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দুই জেলা উত্তর চব্বিশ পরগনা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জুড়ে বিস্তৃত।

সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমি। ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে এবং বাকি অংশ রয়েছে ভারতের মধ্যে।

১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে সুন্দরবন । এর বাংলাদেশ ও ভারতীয় অংশ বস্তুত একই নিরবচ্ছিন্ন ভূমিখণ্ডের সন্নিহিত অংশ হলেও ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় ভিন্ন ভিন্ন নামে সূচিবদ্ধ হয়েছে; যথাক্রমে “সুন্দরবন” ও “সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান” নামে।

সুন্দরবনকে জালের মত জড়িয়ে রয়েছে সামুদ্রিক স্রোতধারা, কাদা চর এবং ম্যানগ্রোভ বনভূমির লবণাক্ততাসহ ক্ষুদ্রায়তন দ্বীপমালা। মোট বনভূমির ৩১.১ শতাংশ, অর্থাৎ ১,৮৭৪ বর্গকিলোমিটার জুড়ে রয়েছে নদীনালা, খাঁড়ি, বিল মিলিয়ে জলাকীর্ণ অঞ্চল।

বনভূমিটি, স্বনামে বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়াও নানান ধরনের পাখি, চিত্রা হরিণ, কুমির ও সাপসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত। জরিপ মোতাবেক ১০৬ বাঘ ও ১০০০০০ থেকে ১৫০০০০ চিত্রা হরিণ রয়েছে এখন সুন্দরবন এলাকায়।

১৯৯২ সালের ২১শে মে সুন্দরবন রামসার স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। সুন্দরবনে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক ঘুরতে আসে। দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক সুন্দরবনের অপরূপ সৌন্দার্যে মুগ্ধ। সুন্দরবন ভিজিট করার মাধ্যমে তার প্রকৃতি থেকে বিভিন্ন জ্ঞান অর্জন করে।

 

উৎসব

প্রধান সামাজিক অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে মুসলমান সম্প্রদায়ের ঈদুল ফিত্‌র , ঈদুল আজহা ও মিলাদুন্নবী এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্গাপূজা। বৌদ্ধদের প্রধান উৎসব বুদ্ধ পূর্ণিমা, আর খ্রীস্টানদের বড়দিন। তবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সামাজিক উৎসব হচ্ছে দুই ঈদ, অর্থাৎ ঈদুল ফিত্‌র ও ঈদুল আজহা।

এছাড়া বাংলাদেশের সর্বজনীন উৎসবের মধ্যে পহেলা বৈশাখ প্রধান। গ্রামাঞ্চলে নবান্ন, পৌষ পার্বণ ইত্যাদি লোকজ উৎসবের প্রচলন রয়েছে। স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস এবং ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে ২১শে ফেব্রুয়ারি তারিখে শহীদ দিবস পালিত হয়।

এছাড়াও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে বৌদ্ধধর্মের অনুসারী চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা, মারমা ও রাখাইনরা প্রবারণা পূর্ণিমার পরদিন থেকে পরবর্তী পূর্ণিমার দিনের মধ্যে কঠিন চীবরদান উৎসবের আয়োজন করে। দ্বিতীয় বৃহত্তম হলো সাঁওতালরা। তাদের সর্ববৃহৎ ও শ্রেষ্ঠ উৎসব ‘সোহরাই’।

মূলত সৃষ্টিকর্তার প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও আনন্দের উৎসব এটি। পৌষ-মাঘ মাসে এটি পালিত হয়। বৈসাবী বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার প্রধাণ ৩টি আদিবাসী সমাজের বর্ষ বরণ উৎসব। এটি তাদের প্রধাণ সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোর একটি।

এ উৎসবটি ত্রিপুরাদের কাছে বৈসুব, বৈসু বা বাইসু , মারমাদের কাছে সাংগ্রাই এবং চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যাদের কাছে বিজু নামে পরিচিত। বৈসাবী নামকরনও করা হয়েছে এই তিনটি উৎসবের এর প্রথম অক্ষর গুলো নিয়ে। বৈ শব্দটি ত্রিপুরাদের বৈসু থেকে, সা শব্দটি মারমাদের সাংগ্রাই থেকে এবং বি শব্দটি চাকমাদের বিজু থেকে। এই তিন শব্দের সম্মিলিত রূপ হলো ‘বৈসাবি’।

 

Leave a Reply

Find Your Desired Tour

Related Travel Blog Post

, ,
রহস্যময় প্রাকৃতিক গুহা আলুটিলা
27/06/20230
জব্বারের বলী খেলা
25/06/20230
Koh Samui Travel Guide Sofhor Tourism,
Koh Samui Travel Guide | Things To Do | Explore Thailand
13/02/20230
Bangkok Travel Guide Sofhor Tourism,
Bangkok Travel Guide | Things To Do | Explore Thailand
12/02/20230
Phuket Travel Guide,
Phuket Travel Guide | Things To Do | Explore Thailand
12/02/20230
Thailand Travel Guide,
Thailand Travel Guide | Things To Do | Explore Thailand
09/02/20230

Why Book With Us?

  • No-hassle best price guarantee
  • Customer care available 24/7
  • Hand-picked Tours & Activities
  • Free Breakfast

Get a Question?

Do not hesitage to give us a call. We are an expert team and we are happy to talk to you.

01817722572

01707500505

sofhortourism@gmail.com

Tour Packages

Nafakhum – Amiakhum

floating market tour packages

Visit Floating Market

nijhum dwip tour

Nijhum Dwip

kuakata tour

Kuakata

saint martin tour

Saint Martin

Proceed Booking