এক দিনে প্রকৃতির বিভিন্ন রূপ দেখতে সাজেকের কোন তুলনাই হয়না। ভাগ্যে যদি সহায় হয় খুব গরমে হা পিত্যস করতে করতে দেখবেন হঠাং বৃষ্টি এবং তারপর দেখবেন চারিদিক অন্ধকার করে দিয়ে নামা মেঘ। আঁকাবাঁকা পাহাড়ী পথ বেয়ে, মেঘের ভিতর দিয়ে সাজেক যাওয়ার তুলনা লেখায় প্রকাশ করা এতো সহজ নয়।
নয়নাভিরাম অরন্যভূমি পথ আর এক পাহাড়ের সাথে আরেক পাহাড়ের বন্ধনে সৃষ্ট পথ দিয়ে ছুটে চলা, আর মেঘের আনাগোনায় পথ কখন যে শেষ হয়ে যায় টেরই পাওয়া যায়না।
সাজেক রাঙ্গামাটি জেলার সর্ববৃহৎ ইউনিয়ন হলেও এর যাতায়াত সুবিধা খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে। রাঙামাটি থেকে নৌ পথে কাপ্তাই হয়ে এসে অনেক পথ হেঁটে সাজেক আসা যায়। খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার। আর দীঘিনালা থেকে ৪৯ কিলোমিটার। বাঘাইহাট থেকে ৩৪ কিলোমিটার।
খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালা আর্মি ক্যাম্প হয়ে সাজেক যেতে হয়। পরে পরবে ১০ নং বাঘাইহাট পুলিশ ও আর্মি ক্যাম্প যেখান থেকে আপনাকে সাজেক যাবার মূল অনুমতি নিতে হবে। তারপর কাসালং ব্রিজ, ২টি নদী মিলে কাসালং নদী হয়েছে ।
পরে টাইগার টিলা আর্মি পোস্ট ও মাসালং বাজার। বাজার পার হলে পরবে সাজেকের প্রথম গ্রাম রুইলুই পাড়া যার উচ্চতা ১৮০০ ফুট। ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই পাড়ার প্রবীণ জনগোষ্ঠী লুসাই। পাংকুয়া ও ত্রিপুরারাও বাস করে এই পাড়ায়। এর হেড ম্যান লাল থাংগা লুসাই।
রুইলুইপাড়া থেকে অল্প সময়ে পৌঁছে যাবেন সাজেক। সাজেকের বিজিবি ক্যাম্প বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিজিবি ক্যাম্প এখানে হেলিপ্যাড আছে । সাজেকের শেষ গ্রাম কংলক পাড়াও লুসাই জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত পাড়া । এর হেড ম্যান চৌমিংথাই লুসাই।
কংলাক পাড়া থেকে ভারতের লুসাই পাহাড় দেখা যায়। যেখান থেকে কর্ণফুলী নদী উৎপন্ন হয়েছে । যদি স্থল পথে যেতে হয়, তাহলে যেতে হবে খাগড়াছড়ি হয়ে। খাগড়াছড়ির শাপলা চত্ত্বর হতে মাহিন্দ্র জিপ/চাঁদের গাড়ী ভাড়া করে, রওয়ানা হতে হবে সাজেকের উদ্দেশ্য এ
জেনে রাখা ভালো যেহেতু পাহাড়ী পথ, তাই ড্রাইভার হিসেবে স্থানীয়দের প্রাধান্য দেয়া ভাল। খাগড়াছড়ি হতে সাজেক যাওয়ার পথে পড়বে প্রথমে দিঘীনালা বাজার। অল্প কিছুক্ষণ বাজারে স্থানীয়দের সাথে সময় কাটিয়ে ঘুরে আসতে পারেন দীঘিনালা বনবিহার।
সাজেকের যাওয়ার অনুমতি নিতে হয় বাঘাইহাট ক্যান্টনমেন্ট থেকে। প্রতিদিন মাত্র দু’বার অনুমতি থাকে সাজেক যাওয়ার। প্রথমটা সকাল ১০ টায় এবং দ্বিতীয়টা বেলা ২ টায়।
তাই সময়ের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে সবসময়। সাধারণত খাগড়াছড়ি থেকে বাঘাইহাট যেতে প্রায় দেড় ঘন্টা সময় লাগে। অনুমতি নেয়ার পর ঘুরে দেখতে পারেন বাঘাইহাট বাজার। বাজার থেকে কিছুক্ষন চলার পথে হাতের বাম পাশে দেখবেন হাজাছড়া ঝর্ণা। সময় থাকলে এর শীতল পানিতে গোসল করতে পারেন।
চলার পথে দেখবেন পাশের সীমান্ত ভারত থেকে আসা মাচালং নদীর অববাহিকায় গড়ে উঠা মাচালং বাজার যা সাজেক ইউনিয়নের প্রধান কেন্দ্রস্থল।
রুইলুই পাড়া সাজেক উপত্যকার মূল কেন্দ্র। মূলত সব কটেজ রিসোর্ট মূল রাস্তার দু’পাশে গড়ে উঠেছে। লুসাই, পাংখোয়া আর লুসাইদের নিয়ে এই উপত্যকা।
রুইলই পাড়া থেকে ২০/২৫ মিনিট হাঁটা দূরুত্বে কংলাক পাড়া। বিশাল পাথর খন্ডের পাদদেশেই কংলাক পাড়ার অবস্থান, যার অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২১০০ফুট উপরে। এখানে বসবাস কারী প্রায়ই সবাই লুসাই। আকাশ পরিস্কার থাকলে এখন থেকে দেখতে পাওয়া যায় ভারতের লুসাই পাহাড়।
এই পাহাড় থেকে সৃষ্টি হয়ে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান নদী কর্নফুলি নদী যা রাঙমাটি হয়ে চট্টগ্রামের ভিতর দিয়ে এসে বঙ্গোপসাগরের সাথে মিলিত হয়েছে।
সাজেকের উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা, দক্ষিনে রাঙামাটির লংগদু ,পূর্বে ভারতের মিজোরাম , পশ্চিমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা। এককথায় বছরের যে কোন সময় যাওয়া যায়। একেকসময় একেকরকম প্রকৃতি তার নিজের রুপ নিয়ে হাজির হয়। যেহেতু পূর্ব পাশ্বে ভারতের মিজোরাম, তাই বড় বড় পাহাড় পাদদেশে জমা মেঘের জন্য সবাই পূর্ব পাশ কিংবা মিজোরাম ভিউ রিসোর্ট কিংবা কটেজে রাত কাটানোর আগ্রহ প্রকাশ করেন।
বর্ষার সবুজ পাহাড়ের সৌন্দর্য্য আর মেঘের সাথে খেলা করার বর্ননা করা সাধ্য কার। আর যদি পরিষ্কার আকাশে মেঘের স্তুপ দেখতে যদি মন চায়, তাহলে শীতকালে যাওয়ায় ভাল।
ইচ্ছে করলে ঘুরে আসতে পারেন এবং উপভোগ করতে পারেন এর অপরুপ সৌন্দর্য্য ও হারিয়ে যেতে পারেন সাজেকে মেঘের মাঝে। সপ্তাহের যেকোন দিন ঘুরে আসতে পারেন কিংবা ইচ্ছে হলে সফর ট্যুরিজমের সাথে প্রতি বৃহস্পতিবার ঘুরে আসতে পারেন মেঘ পাহাড়ের বাড়ী সাজেক এ।
Do not hesitage to give us a call. We are an expert team and we are happy to talk to you.
01817722572
01707500505
sofhortourism@gmail.com