01717-758014 01817-722572

সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ গাইড

সাজেক ভ্যালি রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার এক অপূর্ব মেঘে ঢাকা পাহাড়ি অঞ্চল। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন এবং প্রকৃতির বিশুদ্ধ রূপ উপভোগের জন্য অন্যতম সেরা স্থান। মেঘ, পাহাড় ও সবুজের অপূর্ব সমন্বয় এখানকার প্রধান আকর্ষণ।

সাজেকে কেন ভ্রমণ করবেন?

মেঘের সমারোহ: সাজেক ভ্যালির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হল এর মেঘের সারি। এমন এক দৃশ্য যা আপনার মনকে মুগ্ধ করে তুলবে। কল্পনা করুন, আপনি দাঁড়িয়ে আছেন এক পাহাড়ের চূড়ায় আর আপনার চারপাশে সাদা মেঘের এক বিশাল সমুদ্র। মনে হবে আপনি কোনো স্বর্গীয় লোকে।

পাহাড়ের সারি: সাজেক ভ্যালির সৌন্দর্যের মূল কারণ হল এর পাহাড়ের সারি। সবুজে ঢাকা এই পাহাড়গুলো মেঘের সাথে মিশে এক অবিশ্বাস্য দৃশ্য তৈরি করে।

  • প্রাকৃতিক সৌন্দর্য: সাজেকের পাহাড়গুলোর আকার, আকৃতি এবং সবুজ আচ্ছাদন একেবারে অনন্য।
  • মেঘের সাথে মিশে: বর্ষা ও শীতকালে এই পাহাড়গুলো মেঘে ঢাকা থাকে, যা এক অসাধারণ দৃশ্য তৈরি করে।
  • শান্তি ও নির্জনতা: পাহাড়ের শান্ত পরিবেশ মনকে শান্ত করে।
  • আদিবাসী সংস্কৃতি: সাজেক ভ্যালি শুধু মাত্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই বিখ্যাত নয়, এখানকার আদিবাসী সংস্কৃতিও পর্যটকদের আকর্ষণের একটি অন্যতম কারণ। সাজেকের বিভিন্ন উপজাতি সম্প্রদায়ের নিজস্ব ভাষা, পোশাক, আহার ও জীবন ধারা রয়েছে।

সাজেকের আদিবাসী সম্প্রদায়:

  • লুসাই: সাজেকের সবচেয়ে বড় আদিবাসী সম্প্রদায়।
  • পাংখোয়া: লুসাইদের পর সাজেকের দ্বিতীয় বৃহত্তম আদিবাসী সম্প্রদায়।
  • ত্রিপুরা: সাজেকের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আদিবাসী সম্প্রদায়।

আদিবাসী সংস্কৃতির বিশেষত্ব:

  • ভাষা: প্রতিটি উপজাতির নিজস্ব ভাষা রয়েছে। তবে বাংলা ভাষাও তারা ব্যবহার করে।
  • পোশাক: তাদের পোশাক অত্যন্ত রঙিন ও সুন্দর। বিশেষ করে নারীদের পোশাক খুবই আকর্ষণীয়।
  • আহার: তাদের প্রধান খাদ্য ধান, ভুট্টা, মাছ এবং মাংস।
  • জীবনযাত্রা: তারা প্রকৃতির সাথে খুব ঘনিষ্ঠভাবে বসবাস করে। কৃষি, শিকার এবং বন্য ফল সংগ্রহ তাদের জীবিকার মূল উৎস।
  • ধর্ম:  লুসাইরা খ্রীষ্ট ধর্মের অনুসরারী হলেও, বেশিরভাগ জাতি হিন্দু বা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী।

সাজেকে আদিবাসী সংস্কৃতি উপভোগ করার উপায়:

  • আদিবাসী গ্রামে যাওয়া: সাজেকের বিভিন্ন আদিবাসী গ্রামে গিয়ে তাদের জীবনযাত্রা দেখা।
  • আদিবাসীদের সাথে কথা বলা: তাদের কাছ থেকে তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা।
  • আদিবাসী উৎসবে অংশগ্রহণ করা: যদি কোনো উৎসবের সময় সাজেকে যাওয়ার সুযোগ হয়, তাহলে অবশ্যই অংশগ্রহণ করুন।
  • আদিবাসী হাতের কাজ কেনা: স্থানীয় বাজার থেকে আদিবাসী হাতের কাজ কিনে স্মৃতি হিসেবে রাখুন।

সাজেকের আদিবাসী সংস্কৃতির গুরুত্ব:

সাজেকের আদিবাসী সংস্কৃতি বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই সংস্কৃতিকে সংরক্ষণ করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।

সাজেকে কি কি করবো?

  • ট্রেকিং: সাজেকের পাহাড়ে ট্রেকিং করে আপনি প্রকৃতির নিকট থেকে অনুভূতি নিতে পারবেন।
  • হাইকিং: সাজেকের বিভিন্ন পাহাড়ে হাইকিং করে আপনি নতুন নতুন দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন।
  • ক্যাম্পিং: রাতে খোলা আকাশের নিচে ক্যাম্পিং করে আপনি সাজেকের রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
  • জলপ্রপাত দেখা: সাজেকের বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট জলপ্রপাত দেখতে পাওয়া যায়।

সাজেক ভ্রমণের আগে:

  • পরিকল্পনা করুন: কোন মৌসুমে যাবেন, কতদিন থাকবেন, কোন কোন জায়গা দেখবেন, সব আগে থেকে ঠিক করে নিন।
  • জামা-কাপড়: আবহাওয়া অনুযায়ী জামা-কাপড় নিশ্চিত করুন। ট্রেকিং করবেন বলে থাকলে আরামদায়ক জুতা এবং হালকা ও পাতলা পোশাক রাখুন।
  • ক্যামেরা: সাজেকের সৌন্দর্য ধরে রাখতে ভালো মানের ক্যামেরা নিয়ে যান।
  • প্রথম চিকিৎসা: কোনো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির জন্য প্রথম চিকিৎসার কিট নিয়ে যান।
  • স্থানীয়দের সাথে যোগাযোগ: স্থানীয়দের সাথে যোগাযোগ করে তাদের কাছ থেকে সাজেক সম্পর্কে আরো তথ্য জানতে পারেন।

যেভাবে যাবেন:

১. ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি:

  • বাস সার্ভিস:
    রবি এক্সপ্রেস, গ্রীনলাইন, হানিফ, এস আলম, সৌদিয়া, শ্যামলী, ঈগল, শান্তি পরিবহন।
  • বাস ছাড়ার সময়:
    সন্ধ্যা ৮টা থেকে ১১:৪৫টা পর্যন্ত বিভিন্ন বাস ছাড়ে
  • ভাড়া:
    • নন-এসি: ৭৫০ টাকা।
    • এসি: ১০০০ টাকা।
    • এসি বিজনেস ক্লাস: ১৬০০ টাকা

২. খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক:

  • মোটর সাইকেল
  • চাঁদের গাড়ী
  • মাহিন্দ্র পিকআপ
  • মোটর সাইকেল
  • থ্রি হুইলার অটো
  • প্রাইভেট কার/মাইক্রো
  • জীপ রিজার্ভ করুন:
    সাজেক যাওয়ার প্রধান বাহন হল স্থানীয় জীপ, যা চাঁদের গাড়ি নামে পরিচিত।

    • ভাড়া: ৯০০০-১২০০০ টাকা (আসা-যাওয়া)।
    • জীপ ১০-১৫ জন যাত্রী বহন করতে পারে।
    • মাহিন্দ্র বোলেরো ১০০০০/- (আসা-যাওয়া)
  • বিকল্প:
    • বাইক ভাড়া: ২৫০০-৩০০০ টাকা (আসা-যাওয়া)।
    • সিএনজি ভাড়া: ৩০০০-৭০০০ টাকা।

৩. দিঘীনালা থেকে সাজেক:

  • আপনি খাগড়াছড়ি থেকে দিঘীনালা গিয়ে সেখান থেকে জীপ বা বাইক ভাড়া করতে পারেন। এটি খরচ কিছুটা সাশ্রয়ী হতে পারে।

** জেনে রাখা ভাল, আপনি গাড়ী গুলো খাগড়াছড়ির শাপলা চত্ত্বর থেকে নির্দিষ্ট সমিতি থেকে ভাড়ায় নিতে পারবেন।

Chander Gari Cng Mahindra Pick Up

সাজেকে গিয়ে কোথায় থাকবেন:

সাজেক ভ্যালি বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর একটি পর্যটন এলাকা। এখানে থাকার জন্য বেশ কিছু রিসোর্ট এবং কটেজ রয়েছে, যেগুলো ভিন্ন ভিন্ন বাজেট এবং পছন্দ অনুযায়ী পাওয়া যায়। আমাদের অভিজ্ঞতায় আমরা কয়েকটি রিসোর্টের নাম উল্লেখ করছি।

  1. খাস্রাং রিসোর্ট
  2. মেঘপল্লী রিসোর্ট
  3. লারং
  4. নিরিবিলি রিসোর্ট
  5. ফদাংতাং রিসোর্ট

কিভাবে রুম বুকড করবেন?

  • সরাসরি রিসোর্ট বা কটেজের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এক্ষেত্রে লাইভ ভিডিও আপনার কাজ সহজ করে দিবে।
  • ভ্রমণ এজেন্সির মাধ্যমেও বুকিং করা সম্ভব।
  • সাজেক ভ্রমণের সময় সিজনের কথা মাথায় রাখুন, কারণ সিজন অনুযায়ী রিসোর্ট গুলোর চাহিদা বাড়ে।

কি দেখবেন (দিনভিত্তিক পরিকল্পনা):

দিন ১: যাত্রা এবং সন্ধ্যায় সাজেক পৌঁছানো

  • সকালে খাগড়াছড়ি পৌঁছে নাস্তা করে সাজেকের উদ্দেশ্যে রওনা দিন। এক্ষেত্রে একটা ভাল মানের রেষ্টুরেন্ট বাছাই করতে হবে। কেননা সারারাত জার্নি করে, ঘণ্টা খানেক বিশ্রামের সময় পাওয়া যায়। রেষ্টুরেন্ট যদি ভাল হয়, শরীর আবার যাত্রা করার জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠবে।
  • খাগড়াছড়ি থেকে সকাল ৯ টার আগে আপনাকে খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের উদ্দেশ্য রওনা হতে হবে, আপনাকে সকাল ১০ টার আগে বাঘাইহাট আর্মি ক্যাম্পে উপস্থিত থাকতে হবে। কেননা সাজেকের উদ্দেশ্য ছেড়ে যাওয়া প্রথম স্কট সকাল ১০ টায় বাঘাইহাট থেকে। পরবর্তী স্কট দুপুর ২টায়। এই দুই সময় ছাড়া আপনি সাজেক যেতে পারবেন না। তাই সময়ের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।
  •  আপনি যদি পূর্ব পাশের কিংবা মিজোরাম ভিউ রিসোর্ট রুম বুকড করেন, তাহলে বিকেলে কংলাক পাহাড়ে চলে যান, কেননা সূর্য্যাস্ত সব চেয়ে ভাল দেখা যায় কংলাক পাহাড়ের চূড়া থেকে। সকালটা নিজের রিসোর্টের বারান্দায় বসে নথেকে সূর্য উদয়ের সাথে সাথে মেঘের খেলা উপভোগ করুন। আর পশ্চিশ পাশের রিসোর্ট যদি বুকড করেন, তাহলে খুব ভোরে চলে যাবেন কংলাক পাহাড়ে।
  • সন্ধ্যায় সূর্যাস্ত দেখুন এবং পাহাড়ি রাতের পরিবেশ উপভোগ করুন। সন্ধ্যায় বিভিন্ন রেষ্টুরেন্টের সামনে বিবিকিউ পার্টির সাথে লাইভ মিউজিকে নিজেকে হারাতে পারেন।

দিন ২: সাজেক অন্বেষণ করুন

  • সকালের সূর্যোদয়:
    মিজোরামের বড় বড় মেঘের আড়াল থেকে সূর্য উদয়ের দৃশ্য মূলত সাজেকে করে তুলেছে এতো জনপ্রিয়। তাই রুম বুকিং দেয়ার সময় এটা মাথায় রাখা উচিত, যেন বারান্দায় বসে উপভোগ করা যায়, এই নয়নাভিরাম দৃশ্য।
  • কংলাক পাহাড় ভ্রমণ:
    এটি সাজেক ভ্যালির সবচেয়ে উঁচু স্থান।
  • ঝর্ণা:
    স্থানীয় গাইডের সহায়তায় এটি ভ্রমণ করুন।
  • স্থানীয় আদিবাসী গ্রাম:
    পাংখোয়া ও লুসাই সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রা দেখতে পারেন।

দিন ৩: সাজেক থেকে ফিরে আসা

  • সকালের নাস্তা সেরে সাজেক থেকে খাগড়াছড়ি ফেরত আসুন।
  • সকাল ১০ টায় সাজেক থেকে আপনাকে খাগড়াছড়ি থেকে খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্য রওনা হতে হবে। এটা মিস করলে আবার দুপুর ২টায় আবার আপনি সাজেক থেকে বের হতে পারবেন। এক্ষেত্রে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষে আগে থেকে জানিয়ে রাখতে হবে।
  • দুপুরে খাগড়াছড়িতে খাবার খেয়ে ঘুরে বেড়াতে পারেন, একেএকে জেলা হর্টিকালার পার্ক, আলুটিলা গুহা ও পর্যটন কেন্দ্র, তারেং, রিছাং ঝর্না।
  • রাতের ১০ টায় গাড়ী করে ঢাকা উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু।

খাবার ও রেষ্টুরেন্ট:

  • সাজেকের বেশিরভাগ রেষ্টুরেন্টের খাবার মান ভাল। তবে আমাদের পছন্দ ক্রমান্বয়ে: FOB, সেনিলুসাই, ছিম্বাল ও মনটানা।
  • স্থানীয় খাবার ট্রাই করুন, বিশেষ করে ব্যাম্বু চিকেন, চিকেন গুদায়া, বিভিন্ন শাকসিদ্ধ ও মরিচ ভর্তা।
  • দ্রষ্টব্য:
    খাবারের অর্ডার আগে থেকে নিশ্চিত করুন।

বিশেষ পরামর্শ:

  1. পাওয়ার ব্যাংক এবং প্রয়োজনীয় চার্জিং ডিভাইস নিয়ে যান।
  2. পাহাড়ি পথে ধীর গতিতে চলুন এবং স্থানীয় গাইডের নির্দেশ মেনে চলুন।
  3. ঔষধ ও জরুরি সরঞ্জাম সঙ্গে রাখুন।
  4. গ্রুপে গেলে জীপ বা রিসোর্ট ভাড়া ভাগাভাগি করে খরচ কমানো যায়।
  5. প্লাস্টিক বা অপচনশীল কিছু ফেলার আগে ভেবেচিন্তে ফেলুন। পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখুন।
  6. যেহেতু পাহাড়ে পানি স্বল্পতা আছে, তাই ব্যবহারে মিতব্যয়ী হোন।

Find Your Desired Tour

Related Travel Blog Post

নেপাল ভ্রমণ: বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা নির্দেশিকা
11/12/20250
স্ট্রেস ফ্রি জীবন: বছরে কত ভ্রমণ করলে মন ভালো থাকে
06/12/20250
, ,
সাজেক ও রাঙ্গামাটি ভ্রমণ – দেশি খাবারের স্বাদ, পাহাড়ি হাওয়ার ছোঁয়া আর স্মৃতিময় মুহূর্ত
29/10/20250
cox's bazar
কক্সবাজার: সাগরের ছন্দময় কথোপকথন
11/12/20240
, ,
রহস্যময় প্রাকৃতিক গুহা আলুটিলা
27/06/20230
জব্বারের বলী খেলা
25/06/20230

Why Book With Us?

  • No-hassle best price guarantee
  • Customer care available 24/7
  • Hand-picked Tours & Activities
  • Free Breakfast

Get a Question?

Do not hesitage to give us a call. We are an expert team and we are happy to talk to you.

01817722572

01717-758014

query@sofhor.com

Tour Packages

Nafakhum – Amiakhum

floating market tour packages

Visit Floating Market

nijhum dwip tour

Nijhum Dwip

kuakata tour

Kuakata

saint martin tour

Saint Martin

Proceed Booking