রহস্যময় প্রাকৃতিক গুহা আলুটিলা

প্রাকৃতিক এক গুহা, যেখানে কখনো সূর্যের আলো পৌঁছায় না! কৃত্রিম আলো (টর্চ) কিংবা মশালের আলো ছাড়া ঢুকা সম্ভব হয়না কোন মানুষের পক্ষে। আলো নিয়ে ঢুকে পড়লেও পথটা একেবারে সহজ নয়। ঠান্ডা পানির স্রোতে আস্তে আস্তে সামনে চলতে চলতে কখনো কখনো মাথা নিচু করে চলতে হয়। গা ছমছমে পরিবেশে সবসময় সম্ভাবনা থাকে পিছলে যাওয়ার। এমন এক রহস্যময় গুহার ভিতর দিয়ে চলতে ভয় কিংবা কষ্ট হলেও পাহাড়ের ভিতর দিয়ে পাড়ি দিয়ে অন্য প্রান্তে  পৌঁছার যে আনন্দ, তার কাছে  চলার কষ্টটা খুবই নগন্য। এমন একটি গুহা যদি আমাদের বাংলাদেশে থাকে, কেমন হবে বলুন তো?

অবস্থান

বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলায় এই প্রাকৃতিক গুহার অবস্থান। খাগড়াছড়ি শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান, যা জেলার সবচেয়ে উঁচু পর্বত। যদিও স্থানীয়রা একে টিলা বলে থাকে।

আলুটিলা গুহা

নামকরণ

স্থানীয়দের কাছে যা মাতাই হাকড় বা দেবতার গুহা নামে পরিচিত। খাগড়াছড়ি জেলার সবচেয়ে উঁচু পর্বত আলুটিলা। এটি টিলা নামে পরিচিত হলেও মূলত এটি একটি পর্বতশ্রেণী। আলুটিলার পূর্বের নাম ছিল আরবারী পর্বত। এর সর্বোচ্চ উচ্চতা সমুদ্র সমতল হতে প্রায় ৩০০০ হাজার ফুট। এই পাহাড়ে প্রচুর পরিমাণে বুনো আলু জন্মাতো। লোকমুখে শোনা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় খাগড়াছড়িতে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে স্থানীয়রা এ পর্বত থেকেই বুনো আলু সংগ্রহ করে তা খেয়ে বেঁচে থাকত। তারপর থেকে এ পর্বতটি আলুটিলা নামেই পরিচিতি লাভ করে। এখনও এখানে নাকি প্রচুর পরিমাণে বুনো আলু পাওয়া যায়।

গুহা

প্রধান আকর্ষন

উপমহাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক এ গুহা বা সুড়ঙ্গ জেলার আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের প্রধান আকর্ষণ এর পাদদেশে  অবস্থিত রহস্যময় গুহা বা সুড়ঙ্গ। ফটকের দুই পাশে দুটি শতবর্ষী বটবৃক্ষ আপনাকে স্বাগত জানাবে। বৌদ্ধ স্থাপত্যে গড়া দৃষ্টিনন্দন তোরণ বা ফটক পার হলেই দুই পাহাড় নিয়ে গড়ে ওঠা পর্যটনকেন্দ্র। ফটক দিয়ে পর্যটন কেন্দ্রে প্রবেশের সময় টিকিট কেটে আগাতে হবে সামনের দিকে ,বাম দিকের রাস্তায় হাঁটতে লাগলাম রহস্যময় গুহার সন্ধানে। কিছুক্ষণ পর চোখে পড়ল একটি বিশ্রামাগার ও ওয়াচ টাওয়ার। খাগড়াছড়ি শহরের বেশ কিছুটা অংশ দেখা যায়। অবলোকন করা যায় চেঙ্গী নদীর সাথে আকাশ-পাহাড় আর মেঘের মিতালীর মায়াবী এক আবহ, এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অতুলনীয়, হৃদয় মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো অপূর্ব।

একটু এগিয়ে দূর থেকে দেখা গেল আলুটিলার গুহামুখ। আগে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নামতে হতো গুহামুখে। কিন্তু এখন পর্যটন কর্পোরেশন একটি পাকা রাস্তা ও সিঁড়ি করে দিয়েছে ভ্রমণপিয়াসুদের সুবিধার্তে। ফলে খুব সহজেই হেঁটে যাওয়া যায় গুহামুখে। পাকা রাস্তা শেষ করে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে পাড়ি দিলাম প্রায় ২৬৬টি সিঁড়ি। পেয়ে গেলাম কাঙ্খিত সেই গুহা, আলুটিলা গুহা। পাহাড়ের পাদদেশে পাথর আর শিলামাটির ভাঁজে গড়া এ রহস্যময় গুহা বা সুড়ঙ্গ। গুহামুখের ব্যাস প্রায় ১৮ ফুট।

আলুটিলা Scaled

কাছে যেতেই গা ছম ছম করা পরিবেশ। সারা শরীর শীতল হতে লাগল। গুহাটি খুবই অন্ধকার ও শীতল। কোনো ধরনের সূর্যের আলো প্রবেশ করে না। একেবারেই পাথুরে গুহা। টর্চ আর মোবাইলের আলোর উপর ভরসা করা এগুতে হবে সামনের দিকে।

গুহার উপর দিক থেকে টিপটিপ পানি পড়ছে; নিচ দিয়ে বইছে ঝরনা প্রবাহ। আস্তে আস্তে পা ফেলে সামনের দিকে এগুতে হবে, গুহার তলদেশ খুব পিচ্ছিল। তাই খুব সাবধানে আলো নিয়ে গুহা পাড়ি দিতে হবে। গুহার ভেতরে জায়গায় পানি জমে আছে, রয়েছে বড় বড় পাথর। গুহাটির উচ্চতা মাঝে মধ্যে এতটাই কম যে, নতজানু হয়ে পাড়ি দিতে কষ্ট হয়ে যায়। অনেক পিচ্ছিল পথ, অন্ধকার, শীতল জায়গা, খুব উঁচু–নিচু পাথরখণ্ডের ওপর দিয়ে হাঁটতে হয়। আবার গুহার মধ্যে একটু পানিও থাকে। সবকিছুই মিলে খুব সহজে যে পাড়ি দিবেন, তা কিন্তু না। সবসময় কেমন জানি গা ছমছম করা ভাব থাকে। প্রায় ১২-১৫ মিনিট হাঁটার পর বাইরের সূর্যের আলো চোখে পড়তে শুরু করেছে।

গুহা থেকে বেরিয়ে সেতু পার হয়ে নান্দনিক সিঁড়ি বেয়ে আসলে দেখা মিলবে নন্দনকানন ও কুঞ্জছায়ায়। এর পাশেই বৈচিত্রময় সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে পাহাড়ে খাঁজ কেটে তৈরি করা হয়েছে ৭০০ আসনবিশিষ্ট অ্যাম্ফিথিয়েটার।

Img 20230625 180742 Scaled

একসময় আলুটিলার একমাত্র আকর্ষণ ছিল একটি প্রাকৃতিক গুহা। কিন্তু এখন গুহা দেখতে আসা পর্যটকেরা শান্ত সমাহিত পাহাড়ের রূপও উপভোগ করতে পারবেন। উঁচু পাহাড়ের বেদিতে দাঁড়িয়ে দেখতে পারবেন খাগড়াছড়ি শহরের বিস্তার ও চেঙ্গি নদীর বয়ে চলা। ঝুলন্ত সেতু, গোলচত্বর, নয়নাভিরাম হাঁটাপথ আর পাহাড়ে ধাপ কেটে তৈরি করা সিঁড়ি নিয়ে নতুন সাজে সেজেছে খাগড়াছড়ির আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্র। ২০০ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত এই পর্যটনকেন্দ্রের তোরণ তৈরি করা হয়েছে নতুন করে।

সেতু Scaled

১৮৪ ফুট দীর্ঘ লোহার ঝুলন্ত সেতু (কেব্‌ল ব্রিজ) দিয়ে মিতালী স্থাপন করা হয়েছে দুই পাহাড়ের মাঝে । সেতুটির মাঝে আছে কাচের ব্যালকনি। দুই পাহাড়ের মাঝে ঝুলন্ত সেতুর কাচের ব্যালকনি থেকে পাখির চোখে শহর দেখার অভিজ্ঞতা আপনার মনে ভাললাগা কাজ করবে অনেকদিন।

আলুটিলা

পাহাড়ের বাঁ দিকে সড়ক ধরে গেলেই দেখা মিলবে প্রাকৃতিক গুহা ও ভিউ পয়েন্টের। আর ডান দিকের সড়ক ধরে এগোলেই দুই গজ দূরে নতুনভাবে তৈরি করা হয়েছে ভিউ পয়েন্ট কুঞ্জছায়া, আড্ডা দেওয়ার স্থান নন্দনকানন। কুঞ্জছায়া আর নন্দনকাননের সাদা গোলচত্বর আর বসার বেঞ্চ প্রকৃতির কোলে তন্ময় হতে দর্শকদের হাতছানি দেবে।

অ্যাম্ফিথিয়েটার

যাওয়ার উপায়

আলুটিলা গুহা দেখতে যেতে চাইলে প্রথমে খাগড়াছড়ি আসতে হবে। তারপর খাগড়াছড়ি থেকে স্থানীয় পরিবহণে আলুটিলা গুহায় যেতে হবে। খাগড়াছড়ি শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে মাটি রাঙ্গা উপজেলায় আলুটিলা গুহা অবস্থিত।

ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি

ঢাকা হতে গ্রীন লাইন, রবি এক্সপ্রেস (সেন্টমার্টিন হুন্দাই), শান্তি, হানিফ, এস আলম, শ্যামলী এবং ঈগল পরিবহনের এসি/নন-এসি বাসে চড়ে সরাসরি খাগড়াছড়ি যাওয়া যায়।

চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি

চট্টগ্রামের অক্সিজেন মোড় থেকে বি আর টি সি ও শান্তি পরিবহণের বাস খাগড়াছড়ি ছেড়ে যায়। সকাল ৭টা থেকে শান্তি পরিবহনের বাস ১-২ ঘন্ট পর পর ছেড়ে যায়। এছাড়া বেশ কিছু লোকাল বাসও খাগড়াছড়ি যায়। চট্টগ্রাম থেকে যেতে সময় লাগবে ৪-৫ ঘন্টা।

খাগড়াছড়ি থেকে আলুটিলা গুহা

খাগড়াছড়ি শহর থেকে চান্দের গাড়ি, সিএনজি, মোটরবাইক অথবা লোকাল বাস পাওয়া যায়। আপনারা একসাথে কতজন যাবেন সেই অনুযায়ী সুবিধামত পরিবহণ ব্যবস্থা ঠিক করে নিতে হবে। এছাড়া আলুটিলা গুহার কাছেই বৌদ্ধ মন্দির ও রিসাং ঝর্ণা। তাই সবচেয়ে ভালো আপনি যদি একসাথে এই সব গুলো জায়গা ঘুরে দেখে নিন। গাড়ি ঠিক করার সময় কোথায় কোথায় ঘুরবেন তা বলে নিবেন। এই জায়গা গুলো ঘুরে দেখতে ৪-৫ ঘন্টা লাগবে।

খাবার দাওয়া

আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের ভেতরে খাওয়ার ব্যবস্থার  জন্য কফি শপ ও হালকা স্ন্যাক্সের ব্যবস্থা আছে। তবে যদি একটি ভিন্ন ধরনের স্বাদ গ্রহণ করতে চান, তবে ফদাংথাং রেষ্টুরেন্ট, সিস্টেম অথবা ব্যাম্বুস্যুট রেষ্টুরেন্টে ঢুঁ মারতে পারেন।

জেনে রাখা ভাল

  • সাবধানে হাঁটা উচিত কেননা গুহাটির ভিতর সূর্যের আলো না যাওয়ার কারনে অন্ধকার ও চলার পথ উঁচু-নিচু। ভয় নেই, গুহাতে ভয়ংকর কোন প্রাণী নেই।
  • অনেকে মশাল ব্যবহার করে। দূষনের কারনে আমরা মশাল ব্যবহার করতে নিষেধ করি, তার পরিবর্তে টর্চ কিংবা মোবাইলের আলো ব্যবহার করতে পারেন।
  • আস্তে আস্তে চারপাশে দেখে হাঁটলে দেখবেন সৃষ্টিকর্তার অপরুপ সৃষ্টি। কোথাও একেবারে শুষ্ক আর কোথাও হতে অনবরত ছুঁয়ে ছুঁয়ে পানি পড়ছে।
  • ভেতরে হৈ-হুল্লোড় না করে উপভোগ করুন ও অন্যদের উপভোগ করতে দিন। কেন শুধু শুধু অন্যদের বিরক্তির কারন হবেন?
  • প্রবেশের সময় সঙ্গে কিছু রাখবেন না। এতে আপনার চলতে সুবিধা হবে।
  • মোবাইল ও টাকা সাবধানে রাখুন। নিচে পড়ে যাতে ভিজে না যায়।
  • গুহার ভেতর কিছু ফেলা থেকে বিরত থাকুন। এতে এর পরিবেশ নষ্ট হয় এবং অন্যদের চলাচলে অসুবিধা হয়।
  • শীতের সময় পানি কম থাকে বলে, জুতা পায়ে যাওয়া যায়। তবে প্রায় সারা বছরই গুহাতে পানি থাকে বলে জুতার ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
  • গুহা থেকে বের হওয়ার পর পাবলিক টয়লেটে পা পরিস্কার করার ব্যবস্থা আছে।

আলুটিলা পযটন কেন্দ্র

আপনার সাজেক ভ্রমণ শেষ করে এসে খাগড়াছড়ি আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে রাত ৯ টা পর্যন্ত সময় কাটাতে পারেন। সূর্যাস্তের পাশাপাশি যখন রাতের বেলায় আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে বসে খাগড়াছড়ি জেলা শহরের সৌন্দর্য্য দেখে, মনে হবে দূর পাহাড়ে হাজারো জোনাকি ঝিকমিক করছে।

খাগড়াছড়ির যেসব দর্শনীয় স্থান আপনাকে মুগ্ধ করবেঃ

  • আলুটিলা গুহা (Alutila Cave)
  • মাতাই পুখিরি
  • হর্টিকালচার হ্যারিটেজ পার্ক
  • মানিকছড়ি মং রাজবাড়ী
  • তৈদুছড়া ঝর্ণা
  • পানছড়ি শান্তিপুর অরণ্য কুটির
  • মায়ুং কপাল বা হাতিমুড়া
  • নিউজিল্যান্ড পাড়া
  • রিসাং ঝর্ণা
  • মায়াবিনী লেক

ভ্রমণ সংক্রান্ত যে কোন তথ্য বা সহযোগীতার জন্য ইমেইল করতে পারেন কিংবা 01817722572 নাম্বারে কল দিতে পারেন।

Find Your Desired Tour

Related Travel Blog Post

জব্বারের বলী খেলা
25/06/20230
Koh Samui Travel Guide Sofhor Tourism,
Koh Samui Travel Guide | Things To Do | Explore Thailand
13/02/20230
Bangkok Travel Guide Sofhor Tourism,
Bangkok Travel Guide | Things To Do | Explore Thailand
12/02/20230
Phuket Travel Guide,
Phuket Travel Guide | Things To Do | Explore Thailand
12/02/20230
Thailand Travel Guide,
Thailand Travel Guide | Things To Do | Explore Thailand
09/02/20230
নাপিত্তাছড়া ট্রেইলের ভয়ংকর রূপ,
নাপিত্তাছড়া ট্রেইলের ভয়ংকর রূপ
05/10/20200

Why Book With Us?

  • No-hassle best price guarantee
  • Customer care available 24/7
  • Hand-picked Tours & Activities
  • Free Breakfast

Get a Question?

Do not hesitage to give us a call. We are an expert team and we are happy to talk to you.

01817722572

01707500505

sofhortourism@gmail.com

Tour Packages

Nafakhum – Amiakhum

floating market tour packages

Visit Floating Market

nijhum dwip tour

Nijhum Dwip

kuakata tour

Kuakata

saint martin tour

Saint Martin

Proceed Booking