01819-275661 01707-500505
01819-275661 01707-500505

বাংলার ভূস্বর্গ আমিয়াখুম (Amiakum Water Fall)

Amiakhum waterfall bandarban

বাংলার ভূস্বর্গ হিসেবে পরিচিত আমিয়াখুম জলপ্রপাত

বাংলার ভূস্বর্গ হিসেবে পরিচিত আমিয়াখুম জলপ্রপাত (Amiakum Water Fall) বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তের পাশে অবস্থিত। বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার অন্তর্গত থানচি উপজেলার শেষ প্রান্তে মিয়ানমার সীমান্তের কাছে, নাক্ষিয়ং নামক স্থানে অবস্থিত আমিয়াখুম জলপ্রপাত।

অরণ্য-সবুজ পাহাড়ি ধাপে নেমে আসা দুধসাদা ফেনাযুক্ত জলরাশি মুগ্ধ করে সবাইকে । চারপাশটা বেশ ফাঁকা থাকায়, ক্যানভাসে আঁকা সজীব চিত্র মনে হয় এই জলপ্রপাতকে। ঘন সবুজ আর পাথুরে পাহাড়ের মধ্য দিয়ে প্রবল বেগে নেমে আসা জলধারা ধারণ করে দুধসাদা রঙের ফেনায়। বয়ে চলছে পাথরের গা বেয়ে, ভিজিয়ে পাথুরে চাতল। অবিরাম জলধারার পতন আর নিঃশব্দ ভেদ করা প্রবাহের শব্দতরঙ্গ। এমন সৌন্দর্যের সামনে দাঁড়িয়ে চুপচাপ থাকিয়ে থাকা ছাড়া করার থাকেনা আর কিছুই। শতকষ্ট স্বীকার করে ছুটে আসার স্বার্থকতায় চুপ করে শুধু উপভোগ করা যায়।

মারমা ভাষায় খুম মানে হল জলপ্রপাত, যেখানে পানি কখনো একেবারে শুকায় না। ঝর্নার পানি শুকাবে কিন্তু খুমের না। পাহাড়ী নদী সাঙ্গু বয়ে চলার পথে ছোট ছোট জলপ্রপাতের সৃষ্টি করেছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আমিয়াখুম। তাই বছরের যে কোন সময় যাওয়ার জন্য উপযুক্ত আমিয়াখুম

কিভাবে যাওয়া যায়?

 
বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্গম জায়গাগুলোর মধ্যে অন্যতম আমিয়াখুম। বান্দরবন থেকে ৭৬ কিমি দূরে থানচি হয়ে আমিয়াখুম যেতে হয়।
 

থানচি > রেমাক্রি > পদ্মঝিরি > থুইসাপাড়া > দেবতাপাহাড় > আমিয়াখুম

 
বান্দরবন থেকে লোকাল বাস কিংবা রিজার্ভ জীপে সোজা চলে যাবেন থানচিতে। এতে সময় লাগবে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা। এরপর প্রথম কাজ হচ্ছে লোকাল গাইড ঠিক করা। যে আপনার পথের সফরসংগী হবে। এবার থানচি বাজার থেকে রিজার্ভ নৌকা নিয়ে যাত্রা শুরু হবে রেমাক্রির দিকে।
 
যাওয়ার পথে পড়বে তিন্দুর বড় পাথর বা রাজা পাথর এলাকা। নদীর সবুজ জলরাশি, বড় বড় পাথর আর পাহাড় ঘেরা তিন্দু এতটাই মোহনীয় যে, বাধ্য হবেন যাত্রা বিরতীতে। উপভোগ করুন আর মোহিত হন এর মোহনীয় সৌন্দর্যে। তিন্দু, বড়পাথর হয়ে রেমাক্রি পৌঁছাতে পুরোপুরি ২ ঘণ্টা লাগে । চুপচাপ বসে থাকতে হয় এ দুঘন্টা। কারণ একটু নড়লেই ভয়ঙ্কর ভাবে দুলে ওঠে নৌকা, নদীর তলদেশের পাথরে ঘষা লাগলে মনে হচ্ছিলো এই বুঝি গেলাম।
 
নৌকায় যেতে যেতে উপভোগ করুন খরস্রোতা সাঙ্গু নদী (Sangu River)। নদীর মাঝেই বড় বড় পাথরের মধ্যে দিয়ে এমনভাবে তীব্রবেগে এগিয়ে চলে এই নৌকা যেন বাস্তব না, দারুন কোনো এডভেঞ্চারাস মুভি দেখছি। ভয়ে লোম দাঁড়াবে আবার কিছুক্ষণ পরে মুগ্ধ হবেন এর মোহনীয়তা। এভাবে হাত-পা শক্ত হয়ে যাওয়া ভয় নিয়ে এক সময় বড়পাথর এলাকায় পৌঁছে যাবেন, যেখানে বিশালকায় সব পাথর নদীর মাঝে সগর্বে দাড়িয়ে।
 
পাথরগুলো এতই ঘন যে তার মধ্যে নৌকা গলিয়ে বের করে নিতে চালকের বেশ হিমশিম খেতে হয়। কোনো একটার সাথে ধাক্কা লাগলেই দুমড়ে-মুচড়ে যাবে নৌকা- ছিটকে ফেলে দিবে কোন বিশাল পাথরে। এভাবে বড়পাথর, ছোটপাথর, রাজাপাথর নামক সব দৈত্যাকার পাথর পার হয়ে সন্ধ্যায় পৌঁছে যাবেন রেমাক্রি।
 
এখানে এসে গাইডের সাহায্য নিয়ে বিজিবি ক্যাম্পে এন্ট্রি করে নিতে হবে। গাইডের সাহায্য নিয়ে রাতের থাকা ও খাবারের ব্যবস্থা করে ফেলতে হবে, এই রাতটি হবে আর মনোমুগ্ধকর, হারিয়ে যাবেন তারার মেলায়, কোটি কোটি তারাদের সাথে আড্ডাটা হবে আরও জম্পেশ।
 
ঘুম শেষ না হতেই খুব ভোরে উঠে হাঁটা শুরু হবে নাফাখুমের উদ্দেশ্য। প্রায় তিন ঘন্টা হাঁটার পর দেখা মিলবে এই অপরূপ জলপ্রপাতের। রেমাক্রি খাল ধরে, পিচ্ছিল বড় বড় পাথরের উপর দিয়ে, মাঝে মাঝে বুক সমান পানিতে গা ভাসিয়ে আপনাকে যেতে হবে নাফাকুম (Nafakhum waterfall)। শরীরে যথেষ্ট বিশ্রাম দিয়ে এগিয়ে যেতে যেতে একসময় দেখা মিলবে নাফাকুমের। সময় নিয়ে উপভোগ করুন এর মোহনীয় সৌন্দর্য্য, তারপরে হাঁটা শুরু করুন থুইসা পাড়ার উদ্দেশ্য । আশা করা যায় সন্ধ্যায় দিকে পৌঁছে যাবেন থুইসা পাড়ায়। আরাম করুন আর উপভোগ নিঃসঙ্গতা। আর প্রস্তুতি নিন দেবতা পাহাড় পাড়ি দিতে।
 
এবার পাড়ি দিতে হবে দেবতা পাহাড় – আতঙ্কের নাম। খাঁড়া পাহাড়, লম্বা সরু পাহাড়ী পথ- পড়লে আছড়ে পরতে হবে কয়েকশ ফুট নিচে গভীর খাদে। বাঁচার আর আশা থাকবে না। এইসব শুনতে শুনতে হয়ত মনের কোনে কাজ করছে ভয়! সবকিছু ভুলে হাঁটুন নিজের মত করে আপন গতিতে কারো সাথে প্রতিযোগিতা না করে। একসময় দেখবেন সামনে তার সৌন্দর্য্য নিয়ে আপনাকে মুগ্ধ করছে আমিয়াখুম। সময় কাটান আর উপভোগ করুন নিজের মতো করে। এখান থেকে কিছুদুরে আছে ভেলাখুম, সাতভাইখুম। ভেলা নিয়ে ঘুরে আসুন সময়ের মধ্যে। এক্ষেত্রে সাহায্য করবে আপনার সফরসংগি। পর্যাপ্ত খাবার, তাঁবু এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী সাথে নিয়ে গেলে একটা চাঁদনী রাত কাটাতে পারেন আমিয়াখুমের সাথে। এবার আপনি ফিরে আসতে পারেন সেই পথ দিয়েই, যে পথ দিয়ে গিয়েছেন । কিংবা পাহাড় ডিঙিয়ে রেমাক্রি খাল ছেড়ে দিয়ে পদ্ম ঝিরি হয়ে পদ্মমুখে পৌঁছে সেখান থেকে নৌকা করে থানছি।
 
দীর্ঘসময় স্মার্টফোন আর ইন্টারনেটের যুগে নেটওয়ার্কবিহীন এলাকায় নিয়ম করে সন্ধ্যায় সবাই চা খেতে খেতে তারাদের সাথে আড্ডা আপনি জীবনের অন্য মানে খুঁজে পাবেন। কিন্তু সকল মায়া ত্যাগ করে রওনা দিতে হবে। থুইসাপাড়া থেকে পদ্মমুখ পর্যন্ত হাঁটার গতির তারতম্যের বিচারে সময় লাগে ৬-৭ ঘণ্টা। সকাল ৭টায় থুইসাপাড়া থেকে বিদায় নিয়ে পদ্মঝিরির দিকে হাঁটা শুরু করুন। পাঁচটা পাহাড় আর দুই-তিনটা টিলা পার হয়ে হরিশ্চন্দ্রপাড়া পৌঁছাতে বেলা ১টা বেজে যাবে। দূর থেকে আপনাকে অভ্যর্থনা জানাবে তাজিংডং আর সাকা হাফং পাহাড়। কাগজ কলমে তাজিংডং বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু পাহাড়। কিন্তু আধিবাসীদের মতে তাজিংডং সাকা হাফংয়ের অর্ধেকও না।
 
হরিশ্চন্দ্রপাড়ার জুমঘরে বিশ্রাম নিয়ে নেমে পড়ুন পদ্মঝিরিতে (Padma Jhiri)। আলো-আঁধারি পরিবেশ আর পাহাড়ের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা ছোট বড় ঝিরি দিয়ে তৈরি চমৎকার এক পথের নাম পদ্মঝিরি। সেই ঝিরির উপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বিকাল ৫টায় দিকে পদ্মমুখে পৌঁছে বোটে উঠে থানচিতে চলে আসতে পারেন। অতঃপর চান্দেরগাড়ি রিজার্ভ করে বান্দরবান।

এই ভ্রমণে যা সাথে নেওয়া উচিত

ভ্রমণের সময় যত কম জিনিস নেয়া যায়, মানে যত কম কাপড় নেয়া যায় ততই আরামদায়ক হবে ভ্রমণ ।

  • শুকনা খাবার (বাদাম, কিসমিস, খেজুর, বিস্কিট, পানির বোতল)
  • মশা থেকে বাঁচার জন্য অডোমস
  • গামছা
  • সানগ্লাস
  • হ্যাট কিংবা টুপি
  • প্রয়োজনীয় ঔষধ
  • টর্চ লাইট
  • পাওয়ার ব্যাংক
  • লাইফ জ্যাকেট,
  • ভাল গ্রিপের জুতা
  • ভিজা কাপড় রাখার মত পলিব্যাগ।

Leave a Reply

Proceed Booking