01717-758014 01817-722572

জব্বারের বলী খেলা

গল্পের শুরু

সময়ের সাথে সাথে রচিত হয় নতুন নতুন ইতিহাস। বর্তমানে বসে শুধু আমরা শুধু বুঝতে চেষ্টা করি কেমন ছিল সে সময়?

আজ আমরা বাস করছি স্বাধীন দেশ, নাম তার বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে স্বাধীন হলেও পেক্ষাপট ছিল শতাব্দীরও আগে। এই অঞ্চলের আমরা সবাই মিলে ছিলাম ভারতীয় উপমহাদেশে। বাংলা-বিহার-ওডিশার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার তার সিংহাসন হারান ১৭৫৭ সালে। এ দেশে ব্রিটিশ শাসন শুরু হয়। আমরা হারিয়ে ফেলি আমাদের স্বাধীনতা।

হারানোর পর, ইংরেজদের শাসন কিংবা দু:শাসনে আমরা ধীরে ধীরে বুঝতে পারি স্বাধীনতার সুফল। ইংরেজদের বিরুদ্ধে দানা বাঁধতে থাকে ক্ষোভের আগুন। একসময় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন জোরদার হয়। শুরু হয় স্বদেশি আন্দোলন।

আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশের পাশাপাশি বাঙালি যুবসম্প্রদায়ের মধ্যে ইংরেজ বা ব্রিটিশবিরোধী মনোভাব গড়ে তোলা এবং শক্তিমত্তা প্রদর্শনের মাধ্যমে তাদের মনোবল বাড়ানোর উদ্দেশ্যে সমুদ্র পরিবেষ্টিত চট্টগ্রামের বদরপতি এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর বলী খেলা বা কুস্তি প্রতিযোগিতার প্রবর্তন করেন।  উনার শুধু কুস্তির প্রতি ভালোবাসা ছিল না বরং তাঁর মধ্যে ছিল দেশের প্রতি ভালোবাসা। ওই সময়টায় ব্রিটিশ শাসন অবসানে চট্টগ্রামে দানা বাঁধছিল আন্দোলন।

বলী খেলা

বলীখেলা, যা বিশেষ ধরনের কুস্তি খেলা। এই খেলায় অংশগ্রহণকারীদেরকে বলী নামে ডাকা হয়। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কুস্তি ‘বলী খেলা’ নামে পরিচিত।

চট্টগ্রাম বলির দেশ। কর্ণফুলী ও শঙ্খ নদীর মধ্যবর্তী স্থানের প্রায় উনিশটি গ্রামে মল্ল উপাধিধারী মানুষের বসবাস ছিল। প্রচণ্ড দৈহিক শক্তির অধিকারী এই মল্লরা ছিলেন সুঠামদেহী সাহসী পুরুষ। বংশানুক্রমিক ভাবেই তাদের পেশা হচ্ছে শারীরিক কসরৎ প্রদর্শন। এই মল্লবীরেরাই ছিলেন বলী খেলার প্রধান আকর্ষণ ও বলিখেলা আয়োজনের মূল প্রেরণা।

চট্টগ্রামের বাইশটি মল্ল পরিবার ইতিহাস প্রসিদ্ধ। আশিয়া গ্রামের আমান শাহ মল্ল,কাতারিয়া গ্রামের চান্দ মল্ল,পেরলা গ্রামের নানু মল্ল, জিরি গ্রামের ঈদ মল্ল ও নওয়াব মল্ল, চাতরি গ্রামের চিকন মল্ল, পারি গ্রামের হরি মল্ল, পটিয়ার হিলাল মল্ল ও গোরাহিত মল্ল, হাইদগাঁওর অলি মল্ল ও মোজাহিদ মল্ল, শোভনদন্ডীর তোরপাচ মল্ল, কাঞ্চননগরের আদম মল্ল, ঈশ্বরখাইনের গনি মল্ল, সৈয়দপুরের কাসিম মল্ল,ইমামচরের ইমাম মল্ল, পোপাদিয়ার যুগী মল্ল, খিতাপচরের খিতাপ মল্ল,  নাইখাইনের বোতাত মল্ল, মাহাতার এয়াছিন মল্ল,গৈরলার চুয়ান মল্ল, হুলাইনের হিম মল্ল।

বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশ এবং একই সঙ্গে বাঙালি যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্রিটিশবিরোধী মনোভাব গড়ে তোলা এবং শক্তিমত্তা প্রদর্শনের মাধ্যমে তাদের মনোবল বাড়ানোর প্রেরণা থেকে এই সব মল্ল যোদ্ধা ও স্থানীয়দের নিয়ে  ১৯০৯ সালের ১২ বৈশাখ বকশিরহাটের স্থানীয় ধনী বণিক বদরপাতি এলাকার বাসিন্দা আব্দুল জব্বার সওদাগর নিজের নামে  ব্যতিক্রমধর্মী এক ক্রীড়া বা বলি খেলার আয়োজন করেন। প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য ব্রিটিশ সরকার আবদুল জব্বার মিয়াকে খান বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি আমলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাড়াও বার্মার আরাকান অঞ্চল থেকেও নামী-দামি বলীরা এ খেলায় অংশ নিতেন।

খেলাটা প্রচলন হওয়ার পর আশপাশের বলীরা মাস দুয়েক আগে এসে লালদীঘি ময়দানে জড়ো হতেন। জব্বার মিয়ার বাড়িতেই বড় একটা বৈঠকখানা ছিল। সেই বৈঠকখানায় থাকতেন তারা। সেখানেই তারা খাওয়া-দাওয়া করতেন এবং দিনভর নানা শারীরিক কসরত ও অনুশীলন করতেন আর প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুতি নিতেন।

আস্তে আস্তে চট্টগ্রামের নানা এলাকার বলী বা কুস্তিগীররা এ প্রতিযোগিতায় আসতে শুরু করেন। এক সময় চট্টগ্রামের আশপাশের জেলা-নোয়াখালী, কুমিল্লাসহ নানা জায়গা থেকেও বলীরা আসত। সত্তরের দশক থেকে ধীরে ধীরে সারা দেশের বলীরা আসতে থাকে। এমনকি একবার ফ্রান্স থেকে দুজন কুস্তিগীর জব্বারের বলী খেলায় অংশগ্রহণ করার ইতিহাস আছে।

উৎসবের শুরু

১৯০৯ সাল থেকে শুরু হয় প্রতি বছর ১২ বৈশাখ বলি খেলা অনুষ্ঠিত হয় ধারাবাহিকভাবে। সেই সাথে এই বলী খেলাকে কেন্দ্র করে আয়োজিত হয় লোকজ মেলার, সেখানেও ফুঠে উঠে বাঙ্গালীয়ানার মুনসিয়ানা। বাঙালির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, কালচার যেন ফুটে উঠে এই মেলায়। মেলায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হস্তশিল্প ও স্থানীয়ভাবে তৈরি গৃহস্থালি জিনিসপত্রের পাশাপাশি খাবার সামগ্রীর পসরা নিয়ে আসেন।

Fb Img 1684598128724

সময়ের পরিক্রমায় বর্তমানে অনেকে জব্বারের বলী খেলার পরিবর্তে একে বৈশাখী মেলা হিসেবেও চিনে। জব্বার মিয়ার বলী খেলা ও বৈশাখী মেলা চট্টগ্রামের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও অহংকারে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমানে সবচেয়ে বড় লোকজ উৎসব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বর্তমানে এই মেলা। বলী খেলাকে কেন্দ্র করে তিন দিনের আনুষ্ঠানিক মেলা বসার কথা থাকলেও কার্যত পাঁচ-ছয় দিনের মেলা বসে লালদীঘির ময়দানের আশপাশের আন্দরকিল্লা মোড় থেকে লালদিঘির চারপাশ, হজরত আমানত শাহ (র.)- এর মাজার ছাড়িয়ে জেলরোড, দক্ষিণে বাংলাদেশ ব্যাংক ছাড়িয়ে কোতোয়ালির মোড় এবং পশ্চিমে সিনেমা প্যালেস পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এটিই সম্ভবত দেশের অন্যতম পুরানো এবং বৃহত্তম বৈশাখি মেলা।

হস্তশিল্প সফর

এই মেলা ঘিরে এ অঞ্চলের মানুষের সারাবছরের পরিকল্পনা থাকে। এই মেলা থেকে ঘরের দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত যাবতীয় সামগ্রী কিনে নেওয়া যায়। কী নেই এই মেলায়। জনপদের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কুটিরশিল্পীরা নিয়ে আসেন নানান পণ্য। মাছ ধরার চাঁই, বেতের তৈরি চালুনি-ডালা-কুলা, তৈজসপত্র, মাটির তৈরী পুতুল, খেলনা, ফুলদানি, তালপাখা, টব, হাঁড়ি-পাতিল, কাঠ-বাঁশ বেতের তৈরি আসবাবপত্র, হাতপাখা, ঝাড়ু, শীতলপাটি, মুড়ি-মুড়কি, নাড়ু-মিঠাই, গাছের চারা, দা-বটি, বৈশাখি ফল- নিত্য ব্যবহার্য থেকে শুরু করে গৃহসজ্জার সবকিছুই পাওয়া যায় বৈশাখি মেলায়।

গৃহসজ্জা সফর

তবে এককালে মেলায় যেমন লোকজ গ্রামীণ পণ্যের আধিপত্য ছিল, বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় সেই ঐতিহ্যে খানিকটা হলেও ভাটার টান পড়েছে। মৃৎশিল্প কিংবা কারু-দারুশিল্পকে হঠিয়ে প্লাস্টিক-পণ্যও দখল করছে মেলা।

পেশাদার বলির (কুস্তিগীর) অভাবে বলী খেলার আকর্ষণ কমছে আস্তে আস্তে। বর্তমানে পেশাদার বলী পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এখন আর কেউ বলী কিংবা কুস্তি খেলতে আগ্রহ দেখায় না। আগে গ্রামে গ্রামে বিভিন্ন আয়োজনে নিয়মিত ভাবে এমন কুস্তি আর বলী খেলা হতো। আজ সেই দৃশ্য প্রায় কল্পনার পর্যায়ে চলে গেছে।

Fb Img 1684598125937

জব্বারের বলী খেলার পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন স্থানে যেমন কক্সবাজারে ডিসি সাহেবের বলীখেলা, সাতকানিয়ায় মক্কার বলীখেলা, রাউজানে দোস্ত মোহাম্মদের বলীখেলা, আনোয়ারায় সরকারের বলীখেলা, হাটহাজারীতে চুরখাঁর বলীখেলা, চান্দগাঁওতে মৌলভীর বলীখেলা এখনো কোনরকমে বিদ্যমান। বিগত কয়েক বছর ধরে চট্টগ্রাম নগরীর সিআরবি’র শিরিষ তলায় অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে সাহাবউদ্দিনের বলীখেলা। এটি অবশ্য পহেলা বৈশাখকে ঘিরে আয়োজন করা হয়ে থাকে।

Fb Img 1684598123187

নিয়ামাবলী

বলী খেলায় কোনো পয়েন্টের নিয়ম নেই। দু’জন প্রতিযোগী কুস্তি করতে করতে মাটিতে যার পিঠ যে ঠেসে ধরতে পারবে সে-ই বিজয়ী বলে গন্য হয়। সারা দেশের ১০০ জনের বেশি বলী অংশ নেন লড়াইয়ে। শুরুর দিকে চলে বাছাইপর্ব। লটারির মাধ্যমে বলীরা একজন আরেকজনের সাথে লড়াইয়ে অংশ নেন। সেখান থেকে বাছাই করা হয় আটজন বলীকে। তাঁদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় কোয়ার্টার ফাইনালের চারটি, সেমিফাইনালের দুটি ও ফাইনালের একটি খেলা। একদিনেই এই আয়োজন শেষ করা হয়।

পরিশেষে

নিয়মিত যারা বলী খেলা দেখতে আসেন তাদেরই একজন জানান, আগের সেই আনন্দ এখন আর পান না। আগের মতো বলী খেলা গুলো আর জমছেনা। পেশাদার বলীর অভাবে বর্তমানে বলী খেলা পরিচালিত হয় সৌখিন বলীদের নিয়ে। তাদের শরীর ও কসরত সাধারণ দর্শকের মনে দাগ কাটতে পারছেনা। ফলে আস্তে আস্তে জৌলুস হারাচ্ছে ঐতিহ্যর এই বলী খেলা।  এ জন্য প্রয়োজন আসল বলীদের খুঁজে বের করা। যাকে তাকে সুযোগ না দিয়ে প্রকৃত বলীদের খেলায় সুযোগ দেওয়া।

জব্বারের বলী খেলা আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, কালচার বাঁচিয়ে রাখার অনন্য নিদর্শন। তরুণ প্রজন্মকে এ খেলার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে,  যেন এই ঐতিহ্য কখনো হারিয়ে না যায়।

Find Your Desired Tour

Related Travel Blog Post

নেপাল ভ্রমণ: বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা নির্দেশিকা
11/12/20250
স্ট্রেস ফ্রি জীবন: বছরে কত ভ্রমণ করলে মন ভালো থাকে
06/12/20250
, ,
সাজেক ও রাঙ্গামাটি ভ্রমণ – দেশি খাবারের স্বাদ, পাহাড়ি হাওয়ার ছোঁয়া আর স্মৃতিময় মুহূর্ত
29/10/20250
cox's bazar
কক্সবাজার: সাগরের ছন্দময় কথোপকথন
11/12/20240
Mizoram View Resort Sajek
সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ গাইড
11/12/20240
, ,
রহস্যময় প্রাকৃতিক গুহা আলুটিলা
27/06/20230

Why Book With Us?

  • No-hassle best price guarantee
  • Customer care available 24/7
  • Hand-picked Tours & Activities
  • Free Breakfast

Get a Question?

Do not hesitage to give us a call. We are an expert team and we are happy to talk to you.

01817722572

01717-758014

query@sofhor.com

Tour Packages

Nafakhum – Amiakhum

floating market tour packages

Visit Floating Market

nijhum dwip tour

Nijhum Dwip

kuakata tour

Kuakata

saint martin tour

Saint Martin

Proceed Booking