দুপাশে চিরহরিৎ গাছপালায় বেষ্টিত চোখ ধাঁধানো সবুজ পাহাড়, মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে হ্রদ। চারপাশ জুড়ে শুধু বিমুগ্ধ হওয়ার মত দৃশ্য! প্রকৃতি কতটা অকৃপণ হাতে তার রূপসুধা ঢেলে দিয়েছে তা দেখতে ও অনুধাবন করে হারিয়ে যেতে কাপ্তাই লেকের তুলনা হয় না।
বিস্তীর্ণ জলরাশি , নীল আকাশ আর ছোট ছোট পাহাড়, লেকের মাঝে ছোট ছোট টিলায় বাড়ি গুলো মিশে তৈরি করছে শিল্পীর আঁকা যেন একটি ছবি। এই সৌন্দর্য্য আপনাকেই মুগ্ধ করবেই প্রকৃতির আপন মহিমায়।
পার্বত্য চট্রগ্রামে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই (Kaptai) উপজেলায় রয়েছে মনুষ্যসৃষ্ট দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম স্বাদুপানির হ্রদ কাপ্তাই লেক। সবুজে ঘেরা পাহাড়ি ঝর্ণা, লেকের উপর দিয়ে আঁকাবাঁকা রাস্তা এবং ছোট ছোট পাহাড়ের মুগ্ধকর সৌন্দর্য আপনার জীবনে বয়ে আনবে অনাবিল আনন্দ। কৃত্রিম এই হ্রদটি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আয়তনে সবচেয়ে বড়। এই লেকের একদিকে পাহাড়গুলোতে যেমন আছে সবুজে ঘেরা গাছের সমারোহ, অপরদিকে লেকের জলে রয়েছে বহু প্রজাতির মাছ।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিভাগের অধীনে রাঙ্গামাটি জেলাটি আয়তনে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জেলা, যার সাথে ভারত ও মায়ানমার দুটি দেশেরই আন্তর্জাতিক সীমা রয়েছে। জেলার পর্যটন ও মাছ শিল্প গড়ে উঠেছে মূলত কাপ্তাই লেককে (Kaptai Lake) ঘিরে।
সমগ্র রাঙ্গামাটি জেলা জুড়েই প্রায় দুই হাজার বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ জলাধারটি বিস্তৃত; যার অন্তর্ভুক্ত উপজেলাসমূহ হল রাঙ্গামাটি সদর, কাপ্তাই, বরকল, নানিয়ারচর, লংগদু, জুরাছড়ি, বাঘাইছড়ি ও বিলাইছড়ি।
১৯০৬ সালে তৎকালীন ইংরেজ সরকার কর্ণফুলি নদীর (Karnaphuli River) পানি দিয়ে বিদ্যুৎ তৈরীর জন্য, সর্বপ্রথম জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই করে। পরবর্তীতে ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সরকার আমেরিকার অর্থায়নে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ শুরু করে এবং ১৯৬২ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এ বাঁধটির দৈর্ঘ্য ৬৭০.৬ মিটার ও উচ্চতা ৫৪.৭ মিটার।
ছোট বড় পাহাড়, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা, ঝর্ণা আর জলের সাথে সবুজের মিতালি। পাহাড়ে রয়েছে বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণী, তেমনি লেকের রয়েছে বহু প্রজাতির মাছ ও অফুরন্ত জীববৈচিত্র্য। লেকের চারপাশের পরিবেশ, ছোট ছোট দ্বীপ, নানাবিধ পাখি এবং জলকেন্দ্রিক মানুষের জীবনযাত্রা আপনাকে মুগ্ধ করে রাখবে প্রতি মুহূর্ত।
কাপ্তাই লেকের আশপাশের দর্শনীয় স্থান
- ঝুলন্ত ব্রিজ (Rangamati Hanging Bridge)
- শুভলং ঝর্ণা (Shuvolong Waterfall)
- কাপ্তাই বাঁধ
- কর্ণফুলী নদী (Karnaphuli River)
- নেভি একাডেমি (Navy Academy)
- পলওয়েল পার্ক (Polwel Park)
- ক্যাবল কার (Cable Car)
- কায়াকিং (Kayaking)
- পেদা টিংটিং (Peda Ting Ting Island)
- Floating Restaurants
প্রকৃতি তার সমস্ত রূপ যেন উজাড় করে সাজিয়েছে কাপ্তাই হ্রদকে। বছর যে কোন সময়ে কাপ্তাই লেক ভ্রমণের জন্য যাওয়া যায়, তবে বর্ষায় লেকের পাশের ঝর্ণাগুলোর পরিপূর্ণ রূপের দেখা মিলে। প্রকৃতি এতো সুন্দর হতে পারে, সেটা কল্পনাও করতে পারবেন না। কল্পনা ও স্বর্প্নের সৌন্দর্য্য এক করতে নৌকায় করে পাড়ি দিতে পারেন এই লেক।