রাঙ্গামাটি: রুপের রাণী

রাঙ্গামাটি - রুপের রাণী

নামকরন

প্রাচীনকালে এই অঞ্চলে প্রচুর পরিমানে কার্পাস তুলা পাওয়া যেতো বলেই এর নাম ছিল কার্পাসমহল। পূর্বের কার্পাস মহল ১৮৬০ সালের ২০ জুন রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান- এই তিন পার্বত্য অঞ্চলকে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার সৃষ্টি।পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা থেকে ১৯৮১ সালে বান্দরবান এবং ১৯৮৩ সালে খাগড়াছড়ি পৃথক জেলার সৃষ্টি, পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার মূল অংশ রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।

অবস্থান 

রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা ২২০- ২৭” ও ২৩০- ৪৪” উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১০- ৫৬” ও ৯২০- ৩৩” পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। এর উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা, মিজোরাম, দক্ষিণে বান্দরবান, পূর্বে মিজোরাম ও পশ্চিমে চট্রগ্রাম ও খাগড়াছড়ি।

রাঙ্গামাটি জেলার মোট আয়তন ৬১১৬.১৩ বর্গ কিলোমিটার যা আয়তনের দিক থেকে বাংলাদেশের বৃহত্তম জেলা। দেশের একমাত্র রিক্সা বিহীন ও কাপ্তাই হ্রদ পরিবেষ্টিত শহর।
রাজধানী ঢাকা থেকে এ জেলার দূরত্ব প্রায় ৩০৮ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় সদর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার। রাঙ্গামাটি বাংলাদেশের একমাত্র জেলা, যার সাথে ভারত ও মায়ানমার দুটি দেশেরই আন্তর্জাতিক সীমানা রয়েছে।

চাকমা, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, বম, চাক, মুরং, ত্রিপুরা, খেয়াং, খুমি, লুসাই, ম্রো, পাংখোয়া, সাঁওতাল, মণিপুরী প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে এ জেলায়।
প্রথাগত রাজস্ব আদায় ব্যবস্থায় রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় চাকমা রাজা হলেন নিয়মতান্ত্রিক চাকমা সার্কেল চীফ।

 

ইতিহাস

কার্পাস মহল ছিল ত্রিপুরা, মুঘল, চাকমা ও আরাকানের রাজাদের যুদ্ধক্ষেত্র। চাকমা রাজা বিজয়গিরি রাজ্য জয় করতে করতে এই অঞ্চল জয় করে নেয় ও রাজ্য স্থাপন করে।

১৬৬৬ সালে এই অঞ্চলের কিছু অংশে মুঘলদের অনুপ্রবেশ ঘটে এবং চাকমা রাজার কাছে পরাজিত হয়। এই যুদ্ধে মুঘলদের দুইটা কামান, একটার নাম ফতেহ্ খাঁ কামান চাকমা রাজার হস্তগত হয়। যা এখনো রাঙামাটি রাজবাড়িতে সংরক্ষিত আছে।

 

ভাষা ও সংস্কৃতি

সরকারি ভাষা হিসেবে বাংলা, স্থানীয় বাঙ্গালিরা চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে। এছাড়াও অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভাষা হিসেবে চাকমা, মারমা, ম্রো, ত্রিপুরা, বম, লুসাই, তঞ্চঙ্গ্যা, চাক, খেয়াং, খুমী, পাংখুয়া ইত্যাদি প্রচলিত।

পার্বত্যাঞ্চলে চাকমাদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বিঝু উৎসব। বাংলা মাসের চৈত্র সংক্রান্তির শেষ দুদিন ও পহেলা বৈশাখ এই তিনদিন ধরে চলে বিঝু উৎসব। তাছাড়া প্রত্যেক ধর্মের লোকেরা আলাদা আলাদা ধর্মীয় উৎসব পালন করে থাকে।

 

নদ-নদী

কর্ণফুলি রাঙ্গামাটি জেলার প্রধান নদী। এ নদী ভারতের লুসাই পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে রাঙ্গামাটি উত্তর-পূর্ব সীমান্ত দিয়ে ঠেগা নদীর মোহনা হয়ে রাঙ্গামাটিতে প্রবেশ করেছে। কর্ণফুলি নদীর উপনদীগুলো হল কাচালং, মাইনী, চেঙ্গি, ঠেগা, সলক, রাইংখ্যং। এছাড়া এ জেলায় রয়েছে বাংলাদেশের বৃহত্তম কাপ্তাই হ্রদ

 

দর্শনীয় স্থান

  • আসামবস্তি ব্রীজ
  • উপজাতীয় জাদুঘর
  • ওয়াজ্ঞা চা এস্টেট
  • কর্ণফুলি কাগজ কল
  • কংলাক পাহাড়
  • কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান
  • কাপ্তাই বাঁধ ও কর্ণফুলি পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র
  • কাপ্তাই সেনানিবাস
  • কাপ্তাই হ্রদ
  • চিৎমরম বৌদ্ধ বিহার
  • চিং হ্লা মং চৌধুরী মারি স্টেডিয়াম
  • ঝুলন্ত সেতু
  • টুকটুক ইকো ভিলেজ
  • ডলুছড়ি জেতবন বিহার
  • তবলছড়ি আনন্দ বিহার
  • দুমলং
  • ধুপপানি ঝর্ণা
  • নৌ বাহিনীর পিকনিক স্পট
  • পাবলাখালী বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য
  • পেদা টিং টিং
  • প্যানোরমা জুম রেস্তোরা
  • বনশ্রী পর্যটন কমপ্লেক্স
  • বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট
  • বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্সনায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ স্মৃতি ভাস্কর্য
  • বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র
  • মুপ্পোছড়া ঝর্ণা
  • যমচুগ বন বিহার
  • রাঙ্গামাটি সেনানিবাস
  • রাজবন বিহার
  • রাজা জং বসাক খানের দীঘি ও মসজিদ
  • রাজা হরিশ চন্দ্র রায়ের আবাসস্থলের ধ্বংসাবশেষ
  • লাভ পয়েন্ট
  • শহীদ শুক্কুর স্টেডিয়াম
  • শুভলং ঝর্ণা
  • সাজেক ভ্যালি
  • হাজাছড়া ঝর্ণা

পাহাড়, নদী, মেঘ ও লেকবেষ্টিত একটি বৈচিত্রময় জনপদ যেখানে বাঙ্গালীসহ ১৪টি জনগোষ্ঠির বসবাস। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের কারনেই এর আরেক নাম রুপের রাণী। ইচ্ছে করলে ঘুরে আসতে পারেন এবং উপভোগ করতে পারেন এর অপরুপ সৌন্দর্য্য ও হারিয়ে যেতে পারেন মেঘের মাঝে।

সপ্তাহের যেকোন দিন ঘুরে আসতে পারেন কিংবা  ইচ্ছে হলে সফর ট্যুরিজমের সাথে প্রতি বৃহস্পতিবার ঘুরে আসতে পারেন রুপের রাণী খ্যাত রাঙ্গামাটিতে

Leave a Reply

Proceed Booking