প্রচলিত রূপকথায়, একসময় অসংখ্য বানরের বাস ছিল এই অঞ্চলে। এই বানরগুলো শহরের প্রবেশমুখে ছড়ার পাড়ে পাহাড়ে লবণ খেতে আসত প্রতিনিয়ত । বৃষ্টির কারণে ছড়ার পানি বৃ্দ্ধি পাওয়ায় বানরের দল ছড়া পার হয়ে পাহাড়ে যেতে না পারায় একে অপরকে ধরে সারিবদ্ধভাবে ছড়া পার হয়।
এই জনপদের মানুষ ছড়া পারাপারের এই দৃশ্য দেখতে পায়। এই সময় থেকে জায়গাটির পরিচিতি লাভ করে ম্যাঅকছি ছড়া নামে। মারমা ভাষায় ম্যাঅক অর্থ বানর আর ছি অর্থ বাঁধ। কালের প্রবাহে বাংলা ভাষাভাষির সাধারণ উচ্চারণে এই এলাকার নাম রুপ লাভ করে বান্দরবান হিসাবে। বর্তমানে সরকারি দলিল পত্রে বান্দরবান হিসাবে এই জেলার নাম। তবে মারমা ভাষায় বান্দরবানের নাম রদ ক্যওচি ম্রো।
বাংলাদেশের ৯২°০৪´ থেকে ৯২°৪১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ এবং দক্ষিণ-পূর্বাংশে ২১°১১´থেকে ২২°২২´ উত্তর অক্ষাংশ জুড়ে এ জেলার অবস্থান। ঢাকা থেকে প্রায় ৩২৫ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় সদর থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দূরে এ অবস্থিত।
বান্দরবান জেলার পশ্চিমে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম, পূর্বে রাঙ্গামাটি ও মায়ানমারের চিন প্রদেশ এবং দক্ষিণ ও পশ্চিমে মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশ এবং উত্তরে রাঙ্গামাটি জেলা অবস্থিত।
পার্বত্য চট্টগ্রামের অংশ বান্দরবান । ১৫৫০ সালের দিকে প্রণীত বাংলার প্রথম মানচিত্রে বান্দরবন বিদ্যমান ছিল। তবে এর প্রায় ৬০০ বছর আগে ৯৫৩ সালের দিকে আরাকানের রাজা এই অঞ্চল দখল করে।
১২৪০ সালের দিকে ত্রিপুরার রাজা এই এলাকা দখল করেন । চাকমা রাজা ১৪০০ শতকের দিকে এই অঞ্চল দখল করেন আরাকানের রাজা ১৫৭৫ সালে এই অঞ্চল আক্রমণ করে কিছু এলাকা পুর্নদখল করেন, এবং ১৬৬৬ সাল পর্যন্ত দখলে রাখেন।
মুঘল সাম্রাজ্য ১৬৬৬ হতে ১৭৬০ সাল পর্যন্ত এলাকাটি সুবা বাংলার অধীনে শাসন করে। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই এলাকা নিজেদের আয়ত্বে আনে ১৭৬০ সালে এবং ১৮৬০ সালে এটি ব্রিটিশ ভারতের অংশ হিসাবে যুক্ত হয়।
ব্রিটিশরা এই এলাকার নামকরন করেন চিটাগাং হিল ট্র্যাক্টস বা পার্বত্য চট্টগ্রাম। এটি চট্টগ্রাম জেলার অংশ হিসাবে বাংলা প্রদেশের অন্তর্গত ছিল।
মূলত চিটাগাং হিল ট্র্যাক্টস রেগুলাসন ১৯০০ দ্বারা এই অঞ্চল আনুষ্ঠানিকভাবে আরাকান রাজ্যের অংশ থেকে তৎকালীন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের আওতায় আসে এবং চাকমা সার্কেল, মং সার্কেল ও বোমাং সার্কেল প্রতিষ্ঠিত হয় ।
প্রত্যেক সার্কেলে সার্কেল চীফ বা রাজা নিযুক্ত করা হয়। বান্দরবান জেলা ছিল বোমাং সার্কেলের অন্তর্ভুক্ত। বোমাং রাজ পরিবার ১৬ শতক থেকেই এই অঞ্চল শাসন করছিল। যার কারনে এ জেলার আদি নাম বোমাং থং।
এ অঞ্চলের পাহাড় গুলো মূলত টারসিয়ারী যুগের। পারতপক্ষে ভারতীয় ও ইউরেশীয় টেকটনিক পাত-এর সংঘর্ষের ফলে নৈসর্গিক পাহাড়ের সৃষ্টি হয়।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবানে অবস্থিত পাহাড় সমূহ নিয়ে এ অঞ্চল গঠিত। বিশাল পাললিক সমভূমি সমৃদ্ধ বাংলাদেশকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক দিয়ে করে তুলেছে বৈচিত্রময় ও অপরূপ।
ভাঁজগ্রস্ত এই অঞ্চলের পাহাড় গুলো উত্তর-দক্ষিণে লম্বালম্বি ভাবে অবস্থিত। চিরসবুজ ছোট বড় বৃক্ষরাজি দ্বারা এসব পাহাড় আবৃত। কর্কট ক্রান্তি ও বিষুবরেখার মধ্যবর্তী অঞ্চল হওয়ায় এখানকার জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ।
সরকারি ভাষা হিসেবে বাংলা প্রচলিত। স্থানীয় বাঙ্গালিরা কথা বলে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায়। এছাড়াও অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নিজেদের ভাষা হিসেবে মারমা, ম্রো, ত্রিপুরা, বম, লুসাই, চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা, চাক, খেয়াং, খুমী, পাংখুয়া ইত্যাদি প্রচলিত।
বান্দরবানের মারমাদের বর্ষবরণ উৎসবের নাম সাংগ্রাই। তাছাড়া বড় উৎসবের মধ্যে রয়েছে ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে বা প্রবারণা পূর্ণিমা, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা, দূর্গা পূজা ইত্যাদি ধর্মীয় উৎসব।
বান্দরবনের জেলার অন্যতম প্রধান নদী সাঙ্গু নদী, যা সাংপো বা শঙ্খ নামেও পরিচিত। এই নদীর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল, এটি বাংলাদেশের একমাত্র নদী যা দক্ষিণ থেকে উত্তরে প্রবাহিত হয়। অন্যান্য নদীর মধ্যে রয়েছে মাতামুহুরী নদী এবং বাঁকখালী নদী।
মায়ানমারের আরাকান রাজ্যের পাহাড় থেকে শুরু হয়ে বান্দরবানের ভিতর দিয়ে ১৭৩ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে কর্ণফুলি হয়ে বঙ্গপোসাগরে পড়েছে এই নদী। বান্দরবান শহর থেকে ২ মিনিটের হাঁটা পথে পৌঁছে যাবেন নদীতীরে। দু’দিকে পাহাড়ের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে অপূর্ব এই নদী ।
বর্ষায় পাহাড় বেয়ে ছল ছল শব্দে পানি নেমে ছোট বড় অসংখ্য ছড়া এসে মেশে নদীতে। মেঘমালা পাহাড়ের ওপরে ভেসে বেড়ায়। মনে হবে ইস যদি ওই চূড়ায় উঠলেই বুঝি ছোঁয়া যাবে, ধরা যাবে, ভেসে বেড়ানো যাবে মেঘের মাঝে ।
সাঙ্গুর পাহাড়ের চূড়ায় গাছের ফাঁকে আটকে যায় মেঘ। সেখানেই ঝরে যায় বৃষ্টি হয়ে। এমন স্বর্গীয় অনুভূতি সবসময় ছুঁয়ে যাবে বান্দরবানে।
বৈচিত্রময় পাহাড়, নদী, ঝর্ণায় বান্দরবান হয়ে আছে মুগ্ধ হওয়ার হরেক কারন। আপনি ও বান্দরবান এ ঘুরে আসতে পারেন আমাদের সাথে। সফর ট্যুরিজম প্রতি সপ্তাহে বান্দরবান এ ট্যুর করে।
Do not hesitage to give us a call. We are an expert team and we are happy to talk to you.
01819275661
01707500505
sofhortourism@gmail.com